প্রশ্ন-১. খাদ্য নিরাপত্তা ও রসায়নের মধ্যে সম্পর্ক কী?
উত্তর: খাদ্য বস্তুর স্থায়িত্ব বৃদ্ধি, স্বাদ, গন্ধ ইত্যাদি সংরক্ষণে রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার রয়েছে। আবার খামারে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যবস্তুর রোগ সংক্রমণ প্রতিরোধেও রসায়নের ভূমিকা রয়েছে। এমন কি সংক্রমণ থেকে রক্ষার জন্য যে কৌটাজাতকরণ, তা প্রস্তুতিতে রসায়নের প্রয়োগ উল্লেখযোগ্য। তাই খাদ্য নিরাপত্তায় রসায়নের ভূমিকা অত্যাধিক।
প্রশ্ন-২. খাদ্য নিরাপত্তায় কী কী কৌশল অবলম্বন করতে হয়?
উত্তর: খাদ্য নিরাপত্তায় মূলত দুটি কৌশল অবলম্বন করতে হয়। কৌশল দুটি হল
১. উৎপাদন স্থল হতে বাজার পর্যন্ত নিরাপত্তা কৌশল।
২. বাজার হতে ভোক্তা পর্যন্ত নিরাপত্তা কৌশল।
প্রশ্ন-৩. খাদ্য নিরাপত্তা কৌশলগুলো মূলত কী কী কাজ করে?
উত্তর: খাদ্য নিরাপত্তা কৌশল দুটি ধাপে বিভক্ত। এ কৌশলগুলো মূলত খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও মজুদ প্রক্রিয়াতে মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ, স্বাস্থ্যসতর্কতা, প্রিজার্ভেটিভস এর তথ্য, সত্যায়িতকরণ তথ্য ইত্যাদি সঠিকভাবে অনুসরণের নির্দেশিকা হিসেবে কাজ করে।
প্রশ্ন-৪. খাদ্য নিরাপত্তায় রসায়নের গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: খাদ্যের নিরাপত্তা, মজুদ এবং গুণগতমান রক্ষায় ও স্বাস্থ্যসম্মত খাদ্যবস্তু ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে রসায়নের গুরুত্ব এক কথায় অনবদ্য। প্যাকেটজাত খাদ্যবস্তুর স্থায়িত্ব বাড়ানো বা খাদ্যবস্তুতে অণুজীবঘটিত সংক্রমণ প্রতিরোধে রাসায়নিক বিশ্লেষণ ও প্রয়োগ দুটোই অপরিহার্য। সর্বোপরি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে খাদ্য বস্তুতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, টক্সিন (যা অণুজীব দ্বারা সৃষ্ট), তার প্রতিরোধ ও বিশ্লেষণ অপরিহার্য এবং এতে রসায়নের ধারণা বা প্রয়োগ অত্যাবশ্যকীয়।
প্রশ্ন-৫. খাদ্য বাজারজাতকরণে প্রিজারভেটিভস ব্যবহার করা হয় কেন?
উত্তর: বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে উৎপাদিত খাদ্যসমূহ কোন না কোন প্রিজারভেটিভস দ্বারা সংরক্ষিত থাকে। কঠিন, তরল, অর্ধতরল সকল বাণিজ্যিক খাদ্য প্রিজারভেটিভস দিয়ে প্রস্তুত করে বাজারজাতকরণ করা হয়। কারণ প্রিজারভেটিভস ব্যবহার না করলে খাদ্যের আয়ুষ্কাল খুব বেশি হয় না। অল্প সময়ের মধ্যে খাদ্য নষ্ট হয়ে যায়। আর সে কারণেই খাদ্য বাজারজাতকরণে প্রিজারভেটিভস ব্যবহার করা হয়।
কর্মমুখী রসায়ন
১। দুধে পানির শতকরা পরিমাণ কত ? দুধে শতকার কত ভাগ পানি থাকে?
→৮৭ভাগ।
২।মাছে শতকারা কত ভাগ প্রোটিন থাকে?
→১৪-২২ভাগ।
৩।লোহিত কণিকার লাল অংশ?
→হিমোগ্লোবিন।
৪।ভিটামিন 'সি' কোন ধরণের এসিড?
→সরল জৈব।
৫।মানবদেহের কত ভাগ পানি?
→৭০ভাগ।
৬। প্রশ্নঃ ব্লাঞ্চিং কাকে বলে?
উত্তরঃ আমরা বিভিন্ন পদ্ধতিতে খাদ্য সংরক্ষন করে থাকি। সংরক্ষণের যে পদ্ধতিতে ফল বা সবজিকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফুটন্ত পানি বা স্টিমে প্রায় অর্ধসিদ্ধ করা হয় তাকে ব্লাঞ্চিং বলে।
৭। কিউরিং কী ?
কিউরিং হল খাদ্য সংরক্ষণের অন্যতম একটি সংরক্ষণ ব্যবস্থা যেখানে খাদ্যে উপস্থিত পানির কনাসমূহ লবণ দ্বারা অভিস্রবণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অপসারণ করা হয়৷কারণ এ সময় খাদ্যে কঠিন পদার্থের ঘনত্ব বেড়ে যায় এবং পানির ক্রিয়াশীলতা কমে যায়৷ এভাবে খাদ্যে পঁচনকারী অণুজীবের জন্য প্রতিকূল পরিবেশ তৈরি হয়।
৮। জিলাটিন কী ?
'জেলাটিন' এক ধরনের প্রোটিন উপাদান, যেটি কোলাজেন থেকে আসে। কোলাজেন প্রাকৃতিক প্রোটিন, যা পাওয়া যায় স্তন্যপায়ী প্রাণীর রগ, অস্থিসন্ধি এবং কলায়। এটি তৈরি করা হয় প্রাণির সংযুক্ত কলা, হাড় এবং চামড়া ফুটিয়ে। একবার সিদ্ধ করা হলে কোলাজেন ঠান্ডা হবে এবং জেলি তৈরি করা হয়।
৯। সাসপেনশন কী ?
১০। সাসপেনশন কি? এর উদাহরণ ও বৈশিষ্ট্য
by Shimul Hossain on August 22, 2019 in রসায়ন বিজ্ঞান
সাসপেনশন হলাে কঠিন পদার্থের অসমসত্ত্ব একটি মিশ্রণ যেখানে কঠিন পদার্থের আকৃতি/ব্যাস 1 (µm) মাইক্রোমিটার এর বেশি। সাসপেনশনে অবস্থিত কঠিন পদার্থ স্থির অবস্থায় অধঃক্ষেপণে যাওয়ার উপযুক্ত। অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক দুটি দশা নিয়ে সাসপেনশন গঠিত হয়। অভ্যন্তরীণ কঠিন দশাটি, বাহ্যিক তরল/গ্যাস দশায় মিশ্রিত অবস্থায় থাকে। সাসপেনশনে থাকা কণাগুলাে মাইক্রোস্কোপ দ্বারা সহজেই অবলােকন করা যায় এবং দ্রবণকে বিঘ্নিত না করলে কিছু সময় পর কঠিন কণাগুলাে মিশ্রণ থেকে পাত্রের তলায় পতিত হয়। যেমন পানিতে বালির মিশ্রণ।
সাসপেনশন এর উদাহরণ: ১. পানিতে বালির মিশ্রণ। এরূপ মিশ্রণ তৈরি করে কিছুক্ষণ রেখে দিলে পাত্রের তলায় বালির স্তর জমা হবে।
২. মশা তাড়ানাের এরােসল। এরােসল এ তরল অথবা খুবই সূক্ষ্ম কঠিন কণা গ্যাস এর মধ্যে সাসপেন্টেড বা মিশ্রিত অবস্থায় থাকে।
সাসপেনশন এর বৈশিষ্ট্য: সাসপেনশনে থাকা সূক্ষ্ম কণাগুলাে তাড়াতাড়ি বা দেরীতে পতিত হয়ে তলানি রুপে জমা হবে তা নির্ভর করে সাসপেনশন মিশ্রণের কিছু বৈশিষ্ট্যের উপর। যেমন—
১. সাসপেনশন কণার (অভ্যন্তরীণ দশা) আকার বা ব্যাস।
২. সাসপেনশন মাধ্যম (বাহ্যিক দশা) সান্দ্রতা।
৩. পাশাপাশি কণার মধ্যকার মিথস্ক্রিয়া বা আকর্ষণ।
১১। ফারমেন্টেশন কী ?
জটিল অণুবিশিষ্ট জৈব যৌগ যেমন—কার্বোহাইড্রেটকে এনজাইম নামক জটিল পদার্থের প্রভাবে বিযোজিত বা আর্দ্র বিশ্লেষণ করে অপেক্ষাকৃত সরল, ক্ষুদ্র অণুবিশিষ্ট পদার্থে পরিণত করার প্রক্রিয়াকে ফারমেন্টেশন বা চোলাইকরণ বা গাজন বলে।
এই পদ্ধতিতে শ্বেতসার বা স্টার্চ থেকে ইথানল তৈরি করা যায়।
১২। পিকলিং কী ?
এসিড ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি প্রতিহত করে খাদ্য বস্তুকে পচনের হাত হতে রক্ষা করে। ভিনেগার মৃদু অম্ল হওয়ায় খাদ্যবস্তু সংরক্ষণের সময় ইহা খাদ্যের চতুর্দিকে একটি পাতলা আবরণ তৈরি করে ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করে, একে পিকলিং বলে।
১৩। কলয়েড কী ?
কলয়েড হলো যে সকল তরল পদার্থের মধ্যে অদ্রবণীয় পদার্থের ক্ষুদ্র কণাসমূহ প্রায় সর্বএ বিরাজ করে সেই দ্রবনকে কলয়েড দ্রবণ বলে।
সাধারণত তরল পদার্থে অদ্রবণীয় পদার্থসমূহ মিশ্রণ তৈরির একটু পরেই নিচে অথবা উপরে চলে যায়। কিন্তু কলয়েড এর ক্ষেত্রে এটার বিপরীত কাজ করে। ক্ষুদ্র অদ্রবণীয় পদার্থ গুলো মিশ্রণের সবএই একই পরিমানে থাকে। যে ধর্মের কারণে এমনটা হয় সেই ধর্মই কলয়েট ধর্ম।
উদাহরণঃ- দুধ। দুধের মধ্যে পানি এবং চর্বি বিদ্যমান আমরা জানি পানিতে চর্বি অদ্রবণীয় সুতরাং মিশ্রণের পর চর্বি ভেসে উঠার কথা। ভেসে না উঠে সর্বত্র সমভাবে বিরাজ করছে। এই মিশ্রণটিই কলয়েড মিশ্রণ। কলয়েড মিশ্রণে অদ্রবণীয় পদার্থের আকার ২nm থেকে 500 nm পর্যন্ত। এর বেশি হলে সেটা কলয়েড হবে না।
১৪। মাখন কী ?
মাখন একটি দুগ্ধজাত বা দুধের পণ্য, যা সাধারণ দুধ বা দুধের প্রক্রিয়াজাত দুগ্ধ ক্রীম থেকে তৈরি করা হয়। এটি সাধারণত কোন খাবারে মেখে খাওয়া হয়। এছাড়া রান্না করতে যেমন, কিছু ভাঁজতে, সস তৈরিতে অথবা খাবারে বিশেষ সুঘ্রান আনতে মাখন ব্যবহৃত হয়। মাখনে চর্বি, পানি এবং দুগ্ধ প্রটিন থাকে।
১৫। । শতকরা সংযুক্তিসহ ভিনেগারের রাসায়নিক সংকেতটি লেখ।
ভিনেগার এসিটিক এসিডের (CH3COOH) ৬-১০% ও পানির মিশ্রণে তৈরি | চিনি বা ইথানলকে গাজন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসিটিক এসিডে পরিণত করা হয়। এটি সাধারণতঃ রান্নাকর্মে ব্যবহৃত হয়। এটি মদ কিংবা আপেলের রস দিয়ে উৎপন্ন এলকোহল, ফলের রস ইত্যাদি জাতীয় তরল পদার্থ সহযোগে ভিনেগার তৈরীতে ব্যবহার করা হয়। উক্ত তরলে ইথানল দ্রবীভূত হয়ে ভিনেগারে রূপান্তরিত করে। নির্দিষ্ট ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করেও এটি প্রস্তুত হয়।
CH3COOH
১ভিনেগার হলো অ্যাসিটিক এসিডের ৬ থেকে ১০ শতাংশ জলীয় দ্রবণ। এটি এক ধরনের প্রাকৃতিক ফুড প্রিজারভেটিভ।
এবার এসো, আমরা জেনে নিই কিভাবে ভিনেগার প্রস্তুত করা হয়—
ভিনেগার প্রস্তুতি
ভিনেগার তৈরিতে দুটি রাসায়নিক ধাপ বিদ্যমান। যথা :
প্রথম ধাপে ফলের চিনিজাতীয় দ্রব্যকে অ্যালকোহলে পরিণত করা। চিনির সংকেত আমরা সবাই জানি, C6H12O6। চিনি ইস্টের উপস্থিতিতে বিক্রিয়া করে উৎপাদ হিসেবে পাওয়া যায় ইথানল ও কার্বন ডাই-অক্সাইড।
C6H12O6 —>2C2H5OH+2CO2
২। উৎপন্ন অ্যালকোহলকে ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতিতে জারিত করে ভিনেগারে রূপান্তর করা।
2C2H5OH+202 —> 2CH3 COOH (এসিটিক এসিড)+H2O
১৬ । খাদ্য নিরাপত্তা কী ?
খাদ্য নিরাপত্তা (ইংরেজি: Food security) খাদ্যের লভ্যতা এবং মানুষের খাদ্য ব্যবহারের অধিকারকে বোঝায়। কোন বাসাকে তখনই "খাদ্য নিরাপদ" বলে মনে করা হয়, যখন এর বাসিন্দারা ক্ষুধার্ত অবস্থায় বসবাস করেন না কিংবা খাদ্যাভাবে উপবাসের কোন আশঙ্কা করেন না।
১৭। কৌটাজাতকরণ কী ?
কৌটাজাতকরণ--
কোন পাত্রে খাদ্যকে তাপ প্রয়োগের মাধ্যমে বায়ুরুদ্ধ অবস্থায় সিল করে সংরক্ষণ করার পদ্ধতিকে কৌরাজাতকরণ বলে।
কৌটাজাতকরণের ধাপগুলো কী কী?
কৌটাজাতকরণের ধাপ সমূহ----
কাঁচামাল সংগ্রহ---গ্রেডিং বাছাইকরণ---খোসা ছাড়ানো এবং ছোট ছোট টুকরা করা---ব্লাঞ্চিং---পাত্রে ভর্তি করা---চিনি/লবন এর দ্রবন যোগ করা---এক্জস্টিং---সিলিং---রিটর্টিং---ঠান্ডা করা---লেবেল লাগানো----গুদামজাতকরণ।
১৮। গোলাপ জলে বেশি পরিমাণে কোন পদার্থ থাকে ?
গোলাপ জল (ফার্সি: گلاب; গুলাব) হচ্ছে গোলাপ ফুলের পাপড়ি থেকে প্রস্তুতকৃত সুরভীত জল। এছাড়া পাতন প্রক্রিয়ায় গোলাপ তেল থেকে তৈরী করার সময় উপজাত হিসাবে গোলাপ জল তৈরী হয়। ইউরোপ ও এশিয়ায় খাবারকে সুবাসিত করতে, প্রসাধন এবং ঔষধ প্রস্তুত করতে গোলাপ জল ব্যবহৃত হয়। গোলাপ জলের সাথে চিনির মিশ্রনে গোলাপের সিরাপ তৈরী করা হয়।
কাসান, কামসার এবং বারজক অঞ্চলে গোলাপ জল উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ। ফারসি ভাষায় গুল অর্থ ফুল) এবং আব অর্থ জল।
এতে বেশি পরিমানে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট,
১৯। প্রিজার্ভেটিভ কী ?
যেসব রাসায়নিক পদার্থ অল্প পরিমাণে খাদ্য বস্তুর সাথে মিলিয়ে খাদ্যবস্তুকে ফাংগাস ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ অথবা খাদ্যবস্তুর এনজাইমের প্রভাবে পচন রোধ করা যায়, সেসব পদার্থকে ফুড প্রিজারভেটিভস বলে। ফুড প্রিজারভেটিভসকে মূলত দুই শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যথা:
১. প্রাকৃতিক ফুড প্রিজারভেটিভস
২. কৃত্রিম বা রাসায়নিক ফুড প্রিজারভেটিভস।
২০।কলয়েড ও সাসপেনশনের পার্থক্য কী ?
কলয়েড ও সাসপেনসনের মধ্যে প্রধান পার্থক্য হলো-
কলয়েড হলো কোন তরলের মধ্যে অপর কোন (তরল বা কঠিন) দ্রবিভূত হয় এমন পদার্থের সমসত্ব মিশ্রণ। এখানে পদার্থ দুটির সমসত্ব মিশ্রণ হলেও এদের অণুগুলো বিক্ষিপ্ত ভাবে ছড়িয়ে থাকে যা আপাত দৃষ্টিতে বুঝা যায় না। কেবলমাত্র মাইক্রোস্কপিক পরীক্ষাতেই এ অণুগুলো আলাদা ভাবে সনাক্ত করা সম্ভব। যেমন: দুধ
অপরদিকে সাসপেনশন হলো কোন তরলের মধ্যে অপর কোন (তরল বা কঠিন) দ্রবিভূত হয় এমন পদার্থের অ-সমসত্ব মিশ্রণ। এদের অণুগুলো সম্পূর্ণ আলাদা বৈশিষ্টের থাকে যার ফলে অপেক্ষাকৃত কঠিন পদার্থ টি পাত্রের তলায় তলানী রুপে জমে থাকে। কেবল ঝাঁকুনি দিলে পদার্থ দুটি কিছু সময়ের জন্য মিশে একাকার হয়ে যায় কিন্তু কিছুক্ষণ পরে আবার পাত্রের তলায় তলানী রুপে জমে থাকে। আপত দৃষ্টিতে এ মিশ্রণের উপাদানগুলো সহজেই সনাক্ত করা যায়। যেমন- পানিতে চালের/ময়দার গুড়ার মিশ্রণ
২১। গরুর দুদের শতকরা সংযুক্তি লিখ ।
গরুর দুধের কম্পজিশনে পানি ৮৬ দশমিক ৫ শতাংশ, ল্যাকটোজ ৪ দশমিক ৮ শতাংশ, ফ্যাট ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, প্রোটিন ৩ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। গরুর দুধ সব পুষ্টির আধার ও শক্তির উৎস।
২২। কোয়াগুলেশন কী ?
যে প্রক্রিয়ায় কলয়েড কণাগুলো পরস্পরের খুব নিকটে এসে কলয়ডাল কণার অধঃক্ষেপণ তৈরি করে তাই কোয়াগুলেশন। অর্থাৎ কোয়াগুলেশন হলাে এমন একটি প্রক্রিয়া যার সাহায্যে কোনাে দ্রবণে উপস্থিত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণাকে (Colloid) উপযুক্ত রাসায়নিক পদার্থ (Coagulant) যােগ করে অপেক্ষাকৃত বড় কণায় কোয়াগুলামে রূপান্তরিত করে দ্রবণ থেকে আলাদা করা হয়। শিল্পোৎপাদনে দ্রবণ থেকে বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ অধঃক্ষেপ করার জন্যে কোয়াগুলেশন পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
১। শুষ্ককরণ (Drying Process) : রোদে শুকিয়ে খাদ্য সংরক্ষণ করা হয়। এতে খাদ্যের উপর পানির পরিমাণ কমে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি বাধাগ্রস্থ হয়।
২। শীতলীকরণ (Cooling Process): এ পদ্ধতিতে নিম্ন তাপমাত্রায় অণুজীবের পুনরুৎপাদন এবং বংশবিস্তার হ্রাস পায়। তাছাড়া যে সকল এনজাইম খাদ্য পচনে সাহায্য করে এদের কার্যকলাপ হ্রাস পায়, ফলে খাদ্য সংরক্ষিত থাকে।
৩। ভ্যাকুয়ামপ্যাকিং : বায়ুশূণ্য পরিবেশে ব্যাকটেরিয়া বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় O2 পায় না। ফলে অণুজীব মারা যায় এবং খাদ্য সংরক্ষিত অবস্থায় থাকে।
৪। লবণ যুক্তকরণ/কিউরিং (Curing): অসমোসিস পদ্ধতিতে লবণ মাছ, মাংস থেকে আর্দ্রতা সরিয়ে নেয়। তাছাড়া লবণ ক্লস্ট্রিডিয়াম বটুলিনাম নামক অণুজীব যা খাদ্য পচনজনিত বিষ ক্রিয়া সৃষ্টি করে এর বৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্থ করে।
৫। চিনিযুক্তকরণ : চিনির শিরাপ বা কেলাস আকারে ফল সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়। এ পদ্ধতিতে খাদ্য কেলাসন না হওয়া পর্যন্ত চিনিতে রান্না করা হয়। প্রক্রিয়াকৃত খাদ্য শুষ্ক অবস্থায় সংরক্ষণ করা হয়। যেমন- লাউ, কুমড়ো এদের মোরোব্বা এ পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হয়।
উত্তর: প্রিজারভেটিভ নিম্নোক্ত উপায়ে খাদ্যদ্রব্যকে নষ্ট করা থেকে বিরত রাখে
(i) খাদ্যকে সরাসরি বায়ু ও পানির সংস্পর্শ থেকে দূরে রাখে
(ii) কিছু কিছু প্রিজারভেটিভ অম্লীয় পরিবেশ তৈরী করে যাতে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া বংশ বৃদ্ধি করতে না পারে।
(iii) এনজাইমের কার্যকারিতা নষ্ট করে।
(iv) খাদ্যের মধ্যে অবিরাম চলা রাসায়নিক প্রক্রিয়া গতিকে শ্লথ করে দেয়।
১। খাদ্য লবণ (NaCl): নির্দিষ্ট ঘনমাত্রায় খাদ্য লবণের দ্রবণ দ্বারা খাদ্য সংরক্ষণকে কিউরিং বা Curing বলা হয়। NaCl দ্রবণ খাদ্য দ্রব্য থেকে মুক্ত পানিকে শোষণ করে নেয়। ফলে খাদ্য দ্রব্যের মধ্যে অণুজীব জন্মানোর অনুকূল পরিবেশ পায় না। অনেক ক্ষেত্রে লবণের দ্রবণের সাথে সামান্য ল্যাকটিক এসিড ব্যবহার করা হয়। ফাঙ্গাস ও ছত্রাকের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য অনেক সময় NaCl এর সাথে সামান্য চুনের পানি যোগ করা হয়।
২। চিনি (Sugar): চিনি অসমোসিস পদ্ধতিতে খাদ্যের অতিরিক্ত আর্দ্রতা শোষণ করে খাদ্যকে সংরক্ষণ করে। চিনির গাঢ় দ্রবণের সংস্পর্শে ব্যাকটেরিয়া কোষের মধ্যস্থ জলীয় অংশকে চিনির গাঢ় দ্রবণ অসমোসিস প্রক্রিয়ায় শুষে নেয়। ফলে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে না। পানি ছাড়া অণুজীব খাদ্যের ভিতর জন্মাতে পারে না। এতে খাদ্য সংরক্ষিত অবস্থায় থাকে।
৩। তেল (Oil): খাদ্যের উপরিভাগে তেলের স্তর অণুজীবকে খাদ্যের সংস্পর্শে আসতে বাধা দিয়ে খাদ্য সংরক্ষণ করে। তেল খাদ্যকে জরিত হতে না দিয়ে পচনের থেকে রক্ষা করে। অর্থাৎ Anti-Oxidant হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া O2 তৈলাক্ত স্তরভেদ করে পানির স্তরে যেতে পারে না।
৪। মসলা (Spices): বিভিন্ন প্রকার হলুদ, মরিচ গুড়া খাদ্যের স্বাদই শুধু বৃদ্ধি করে না। এদের মধ্যে উপস্থিত বিভিন্ন উপাদান Anti-Oxidant, Anti-Virus এবং Anti-bacterial হিসেবে কাজ করে। এ সমস্ত উপাদানগুলো বায়ুর O2 এর সাথে মাছ, মাংসের বিক্রিয়ার গতি হ্রাস করে। পাশাপাশি PH মান নিয়ন্ত্রণ করে। এনজাইমের কার্যকারিতা হ্রাস করে।
৫। অ্যালকোহল (Alcohol): এটি পানিতে অধিক মাত্রায় দ্রবণীয়। H বন্ধনের মাধ্যমে H2O সাথে মিশে গিয়ে সর্বত্র সুষম ঘনমাত্রা বজায় রেখে অণুজীবের বৃদ্ধি ও বংশবিস্তার রোধ করে। অধিকাংশ অনুজীব বংশবিস্তারের অনুকুল PH হল 6.5 থেকে 7.5।
৬। ভিনেগার (Vinegar): 6-10% CH3COOH এসিডের জলীয় দ্রবণকে ভিনেগার বলে। এটি খাদ্য দ্রব্যের PH মানকে কমিয়ে আনে অর্থাৎ অম্লত্ব বাড়িয়ে দেয়। ফলে উচ্চ অম্লীয় দ্রবণে ব্যাকটেরিয়াগুলো সহজে ধ্বংস হতে পারে।
১। Anti-Microbial Agent: যেসব প্রিজারভেটিড খাদ্যে ব্যাকটেরিয়া বা ফাংগাস বৃদ্ধি রোধ করে তাকে অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল এজেন্ট বলে। এটি খাদ্যদ্রব্যের ব্যাকটেরিয়া, Mold (ছত্রাক), ঈষ্ট এর বৃদ্ধি প্রতিহত করে। বিভিন্ন ধরনের সংরক্ষক এক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। যেমন- ((Na,K)) সরবেট SO2। তাছাড়া মাছ ও মাংসজাত খাদ্য সংরক্ষণেNa বা K,NO2−– এবং NO3−– লবণ ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া বেনজয়িক এসিড, Na – বেনজয়েট, প্রোপানয়িক এসিড, Na – প্রোপানয়েট।
i) Naবেনজয়েট: বেনজয়িক এসিডের দ্রাব্যতা কম বলে এর লবণ Na বেনজয়েট ব্যবহৃত হয়। এটি খাদ্যের মধ্যে সহজে দ্রবীভূত হয়ে বেনজয়িক এসিড উৎপন্ন করে যা খাদ্যের কোষে শোষিত হয়। এতে কোষের PH মান কমে আসে ফলে অণুজীবগুলো বংশবিস্তার করতে পারে না। বেনজোয়িক এসিডের PH মান 4.2।
ii) Na প্রোপানয়েট: Na প্রোপানয়েট সংরক্ষক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটিও PH মান কমিয়ে অণুজীবের বৃদ্ধিকে ব্যাহত করে। এটি সাধারণত পাউরুটি এবং পনির সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়।
iii) বেনজায়েট: জ্যাম, জেলি, কার্বনেটেড বেভারেজ, ফলের রস ও আচার সংরক্ষণে সোডিয়াম বেনজোয়েট ব্যবহার করা হয়। কম PH মানের কার্যকারিতা সীমিত, তবে খাদ্যের এসিডিটি বাড়ালে এর কার্যকারিতা বাড়ে। খাদ্যে 0.1% বা এর চেয়ে কম পরিমাণে এটি ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে।
সোডিয়াম বেনজোয়েট খাদ্যের মধ্যে দ্রবীভূত হয়ে বেনজয়িক এসিড উৎপন্ন করে যা খাদ্যের কোষে শোষিত হয়। এতে ইন্ট্রাসেলুলার কোষে PHএর মান দুই এর নিচে নেমে আসে ফলে ফসফোফ্রুক্টোকাইনেজের মাধ্যমে গ্লুকোজের অ্যান অ্যারোবিক ফারমেন্টেশন শতকরা 95% কমে যায়। এটি ঈস্ট (Yeast) এর কোষ প্রাচীরের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে এবং ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়াকে চরমভাবে ব্যাহত করে। ঈস্ট থেকে নিঃসৃত বিভিন্ন এনজাইম ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে এবং খাদ্যকে নষ্ট করে। ফলে বেনজয়েটযুক্ত খাদ্যে অণুজীব জীবনধারণ ও বংশবিস্তার করতে পারে না।
iv) প্রোপানয়েট: এটি খাদ্যে মোল্ড জন্মাতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। এটি পাউরুটি, কেক ও পনির সংরক্ষণে ব্যবহার করা হয়। নিম্ন PHমানের একটি খাদ্যে এটি ভাল কাজ করে । PH বাড়লে এর কার্যকারিতা কমে যায়। খাদ্যে 0.1% হারে প্রোপানয়েট ব্যবহার করা যায়। ক্যালসিয়াম প্রোপানয়েট যুক্ত পরিবেশে অণুজীব বাঁচতে পারে না। এর অনুমোদন যোগ্য মাত্রা হল 1%.
v) সরবেট: এটি মোল্ড ও ঈস্ট প্রতিরোধে খুবই কার্যকর তবে ব্যাকটেরিয়া রোধে কম শক্তিশালী। এটি ফারমেন্টেশন প্রক্রিয়ায় বাধা প্রদান করে। পনির, পাউরুটি, বিস্কুট, কেক, বেভারেজ, সিরাপ, ফলের জুস, জ্যাম, জেলি, আচার প্রভৃতিতে এটি ব্যবহৃত হয়। এটি ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম বা পটাসিয়াম সরবেটরূপে বাজারে পাওয়া যায়। খাদ্যে সংরক্ষণের অনুমোদিত মাত্রা 0.1%, এটি কম PH মানে খুব কার্যকর, তবে PH বাড়লে এর কার্যকারিতা কমতে থাকবে। সরবেট খাদ্যের PH এর মান 4 – 5 সীমায় রেখে এসিডিক পরিবেশ তৈরি করে ক্ষতিকারক অণুজীব ধ্বংস করে। মানবদেহে সরবিক এসিড শোষিত হয় এবং বিয়োজিত হয়ে CO2, এবং H2Oতৈরি করে। এর বিষক্রিয়া খাদ্য লবণের 121এবং সোডিয়াম বেনজোয়েটের 401ভাগ। তাই সরবেট একটি অতি ব্যবহৃত সক্রিয় প্রিজারভেটিভস। এটি খাদ্যের স্বাদ, গন্ধ এবং রং এ কোনো পরিবর্তন করে না।
vi) জৈব এসিড ও তার লবণ: সাইট্রিক এসিড, প্রোপানয়িক এসিড, ল্যাকটিক এসিড এবং তাদের লবণ বাহির থেকে যোগ করা হয় অথবা খাদ্যের ভেতরে উৎপন্ন হয়। ফলের ঘ্রাণ ও সংরক্ষণের জন্য সিরাপ, ড্রিংকস, জ্যাম, জেলিতে সাইট্রিক এসিড যোগ করা হয়। বিভিন্ন ধরনের লবণ দ্রবণে উৎপাদিত খাদ্য বা আচার তৈরিতে ল্যাকটিক এসিড ও এসিটিক এসিড ব্যবহার করা হয়। কমলালেবু, আনারস ইত্যাদির রসে সাইট্রিক এসিড আছে।
vii) এসিটিক এসিড: ভিনেগার হিসেবে এসিটিক এসিড ব্যবহার করা হয়। ভিনেগারে 6-10% এসিটিক এসিড থাকে। ভিনেগার খাদ্যের PH কমাতে ভূমিকা রাখে। খাদ্যের সাথে ভিনেগার ব্যবহার করলে খাদ্যের ব্যাকটেরিয়া ও ঈস্টের বিরুদ্ধে এটি প্রতিরোধ গড়ে তোলে বা ধ্বংস করে। এটি আচার ও সস তৈরিতে ব্যাপক পরিমাণে ব্যবহৃত হয়।
viii) নাইট্রাইট ((NO2−)) ও নাইট্রেট ((NO3−)) : মাংস ও মাংসজাত দ্রব্য সংরক্ষণে KNO3ও KNO2বা NaNO3ও NaNO2এর মিশ্রণ ব্যবহার করা হয়। নাইট্রেট খুব ভালো সংরক্ষক নয়। মাংসে Clostridium botulinum প্রতিরোধে নাইট্রাইট ও নাইট্রেট লবণের যথাক্রমে 200ppm ও 500 ppm দ্রবণ ব্যবহার করা হয়।
খাদ্য নিরাপত্তা
খাদ্য নিরাপত্তা
ix) ইপোক্সাইড: ইথিলিন অক্সাইড জাতীয় ইপোক্সাইড কম আর্দ্রতা বিশিষ্ট খাদ্যবস্তুর জন্য কার্যকরী সংরক্ষক, মসলা, বাদাম ও শুষ্ক ফল সংরক্ষণে ব্যবহৃত হয়।
২। Anti-Oxidant Agent : খাদ্য দ্রব্য যাতে জারিত না হয় তাই এটি ব্যবহৃত হয়। এটি খাদ্যদ্রব্যকে কালো দাগ সৃষ্টি হতে রক্ষা করে । SO2, ভিটামিন E, C, বিটা ক্যারোটিন, BHT, BHA, TBHQ, প্রোপাইল গ্যালেট প্রভৃতি Anti-Oxidant হিসেবে ব্যবহৃত হয়। সাধারণত SO2এর উৎস হিসেবে K মেটা-বাই-সালফাইট ((K2O,2SO3 বা K2 S2O5) বা পাইরো সালফাইট ব্যবহৃত হয়। তরল বা গ্যাসীয় SO2 অপেক্ষা এটি ব্যবহার করা সহজ। নিরপেক্ষ বা ক্ষারীয় মাধ্যমে এটি স্থিতিশীল হলেও কার্বনিক, সাইট্রিক বা টারটারিক এসিডের এর মত দুর্বল এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে KMS/SO2 গ্যাস উৎপন্ন করে। যেমন- ফল বা ফলের রস সংরক্ষণে যখন KMS যোগ করা হয় তখন তা নিম্নরূপে ফলের রসের এসিডের সাথে বিক্রিয়া করে SO2গ্যাস উৎপন্ন করে।
মুক্ত মূলক শোষণকারী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হলো– (১) বিউটাইলেটেড হাইড্রক্সি এনিসল, BHA (butylated hydroxy anisole); (২) বিউটাইলেটেড হাইড্রক্সি টলুইন, BHT; (৩) টারসিয়ারি বিউটাইল হাইড্রকুইনোন, TBHQ; (৪) প্রোপাইল গ্যালেট (Propylgallate)।
অক্সিজেন শোষণকারী অ্যান্টি অক্সিডেন্ট : (১) ভিটামিন-C, (২) ভিটামিন-E (৩) সালফাইট লবণ।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমূহ দুই শ্রেণিভুক্ত: যেমন (i) প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও (ii) অনুমোদিত কৃত্রিম অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট।
প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমূহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক খাদ্য-বস্তুর উৎসে থাকে। যেমন,
১. ভিটামিন-C বা এসকরবিক এসিড : টকফল, বিভিন্ন শাকসবজি, কাঁচামরিচ ইত্যাদি।
২. ভিটামিন-E বা টকোফেরল : সবুজ শাক-সবজি, শস্য-দানা বা বীজ, গমের অংকুর, উদ্ভিজ্জ তৈল (সয়াবিন তৈল, সরিষা তৈল) ইত্যাদি।
৩. বিটা (β) ক্যারোটিন : মিষ্টি কুমড়া, মিষ্টি আলু, টমেটো, গাজর, বিভিন্ন ফল যেমন: তরমুজ, জাম, এপ্রিকট ইত্যাদি।
8. অধাতু সেলেনিয়াম, Se(34) : মাছ, মুরগির মাংস, ডিম, রসুন ইত্যাদি। আন্তর্জাতিক খাদ্য সংস্থা কর্তৃক অনুমোদিত কৃত্রিম অ্যান্টি-অক্সিডেন্টসমূহ হলো BHA, BHT, TBHQ ও প্রোপাইল গ্যালেট।
৩। কিলেটিং এজেন্ট (Chelating Agent): খাদ্যবস্তুতে বিদ্যমান অবস্থান্তর ধাতুর আয়নগুলোকে সন্নিবেশ বন্ধন দ্বারা আবদ্ধ রাখতে যে রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহৃত হয় তাদেরকে কিলেটিং এজেন্ট বলে। যেমন: EDTA, ল্যাকটিক এসিড, পলি ফসফেট, ইথিলিন ডাই অ্যামিনো। Co3+ চর্বির মধ্যে উপস্থিত ভিটামিন A বিনষ্ট করে ইত্যাদি। খাদ্যবস্তুর মধ্যে থাকা অবস্থান্তর ধাতুর আয়ন (trace elements : Fe2+,Fe3+,Co3+,Cu2+) তৈল-চর্বির জারণ-বিয়োজন ক্রিয়ায় প্রভাবকরূপে ক্রিয়া করে। যেমন কপার আয়ন দ্বারা এসকরবিক এসিড, ভিটামিন-E, থায়ামিন, ফলিক এসিড বিনষ্ট হয় এবং Cu,Fe উভয়ে চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন-A বিনষ্ট করে ও খাদ্যবস্তুকে বিবর্ণ করে। তাই খাদ্যবস্তুর এ সব অবস্থান্তর ধাতুর আয়নকে দুই বা ততোধিক সন্নিবেশ বন্ধন দ্বারা আবদ্ধ রাখতে যে রাসায়নিক যৌগ ব্যবহৃত হয়, এদেরকে কিলেটিং এজেন্ট বলে। (Greek ‘Chele (কিলে) = Crab’s Claw)। খাদ্যবস্তু সংরক্ষণে শিল্পক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত কিলেটিং এজেন্ট হলো EDTA [ethylene diamine tetra acctate, ((O2C−H2C)2 N− CH2CH2−N(CH2CO2−)2] এর চারটি O পরমাণু ও দুটি N পরমাণুতে মোট ছয়টি নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন যুগল আছে। তাই EDTA আয়ন লিগ্যান্ড বা কিলেটিং এজেন্টরূপে Fe2+,Fe3+ এর সাথে ছয়টি সন্নিবেশ বন্ধন দ্বারা আবদ্ধ হতে পারে। এছাড়া ইথিলিন ডাইঅ্যামিন ((H2 N−CH2−CH2−NH2)) কিলেটিং এজেন্ট ব্যবহৃত হয়। গাছের নির্যাস, সরিষার গুড়া, চা তেও প্রাকৃতিক অ্যান্টি অক্সিডেন্ট পাওয়া যায়।
ইথানয়িক এসিডের 6-10% জলীয় দ্রবণকে ভিনেগার বলা হয়। এটি একটি বহুল ব্যবহৃত Preservative যা বাজারে সিরকা নামেও পরিচিত। এটি ব্যবহারে খাদ্যদ্রব্যের PH মান কমিয়ে দেয়। এতে বিভিন্ন প্রকার অণুজীব জীবন ধারণ বা বংশবিস্তার করতে পারে না। এর সুবিধাগুলো হচ্ছে-
১। এর কোনো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।
২। এটি মৃদু এসিড হওয়ায় খাওয়ার সাথে গ্রহণ করলে অ্যাসিডিটি বাড়ার কোনো সম্ভাবনা থাকে না বরং খাবারও দেহের pH এর সমতা বজায় রাখে।
৩। এটি পানিতে যে কোনো অনুপাতে দ্রবণীয়। কারণ এটি পানির অণুর সাথে H বন্ধন গঠন করতে পারে ফলে খাদ্যের পানির সাথে সহজে মিশে সর্বত্র সুষম ঘনমাত্রা বজায় রেখে অণুজীবের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলে।
৪। এর স্ফুটনাঙ্ক H2O অপেক্ষা বেশি হওয়ায় খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করণের সময় তা প্রয়োগে এর বাস্পীভূত হওয়ার সুযোগ থাকে না।
৫। ভিনেগারের জলীয় দ্রবণের PH মান 2.35 যা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট।
যে সমস্ত রাসায়নিক পদার্থ নিজে জারণ ক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে অন্য পদার্থের জারণ ক্রিয়া রোধ করে তাদেরকে Anti-Oxidant বলে। সাধারণত খাদ্য সংরক্ষকের Anti-Oxidant খাদ্য বস্তুর সংরক্ষণে সহায়তা করে। এর ফলে খাদ্যবস্তু সহজে জারিত হয় না। খাদ্য দ্রব্যের কালো দাগ সৃষ্টি থেকে রক্ষা করে।
বায়ুমন্ডলের O2 দ্বারা জারণ খাদ্য নষ্ট হওয়ার একটি প্রচলিত প্রক্রিয়া। চর্বি জাতীয় খাদ্যের ক্ষেত্রে জারণ প্রক্রিয়াটি একটি প্রবল সমস্যা হিসেবে পরিগণিত। চর্বির জারণ শিকল (Chain Reaction) বিক্রিয়ার মাধ্যমে সংগঠিত হয়। চর্বির অণু যখন O2এর সাথে বিক্রিয়ায় লিপ্ত হয় তখন অধিক ক্রিয়াশীল মুক্ত মূলক বা (Free Radical) উৎপন্ন হয়
উৎপন্ন alkyl free-radical টি আরেক অণু O2এর সাথে বিক্রিয়া করে Per-Oxi-free redical তৈরি করে
R∙+O2=R−O−O∙
পরবর্তীতে Per-Oxi-free-radical অপর একটি চর্বির অণু সাথে বিক্রিয়া করে alkyl-Hydro-Per-Oxide এবং alkyl free radical তৈরি হয়। উৎপন্ন অ্যালকাইল free-radical বিক্রিয়াটির পুনরাবৃত্তি করে যা শিকল বিক্রিয়ার মতো চলতে থাকে
R−O−O∙+R−H=R−OOH+R∙
এভাবে চর্বির সাথে বিক্রিয়ার ফলে চর্বির পচন ঘটে। ফলে বিরক্তিকর গন্ধের সৃষ্টি হয়। এই শিকল বিক্রিয়াকে বন্ধ করার জন্য Anti-Oxidant(BHA, BHT), গুলো ব্যবহৃত হয়। এই Anti-Oxidant গুলো জারণের শিকল বিক্রিয়ার পথকে ভিন্ন পথে নিয়ে যায়। এই প্রক্রিয়ায় কম সক্রিয় অ্যারাইল (Ar.) free-radical উৎপন্ন হয়। যেটি পরবর্তীতে আর অংশগ্রহণ করে না। এর ফলে শিকল বিক্রিয়াটি থেমে যায় এবং চর্বির জারণ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হয়।
১। Na বেনজয়েট: এটি ইস্ট এবং Mould কে আক্রমণ করে। এটি Anti-microbial প্রকৃতির। এটি অ্যালার্জি এবং মস্তিষ্ক কোষের ক্ষতি করে। এটি Anti-microbial প্রকৃতির।
২। সালফাইট : এটি বিভিন্ন প্রকার অণুজীবকে আক্রমণ করে। এর কৌশল Anti-Oxidant প্রকৃতির। মাথা ব্যথা, এলার্জি এবং ক্যান্সার সৃষ্টিতে সাহায্য করে।
৩। নাইট্রাইট: এটি বিভিন্ন প্রকার Bacteria ধ্বংসের ব্যবহৃত হয়। এর কৌশল Anti-microbial প্রকৃতির। এটি ক্যান্সার সৃষ্টিতে সাহায্য করে।
৪। ফরমেট/ফরমেট লবণ: এটি ইস্ট এবং মন্ডকে আক্রমণ করে। এটি Anti-microbial প্রকৃতির। এটি খাবারের রং এবং রুচি নষ্ট করে, কিডনী নষ্ট হয়।
১। তরল মাধ্যমে কঠিন পদার্থের যে অসমসত্ত মিশ্রণে সূক্ষ্মতম কঠিন পদার্থ বা কণাগুলোর আকার 100μm - এর আধিক হলে তা সাসপেনশন হিসেবে ধরা হয়। কোয়াগুলেশন হলো কোন পদ্ধতির মাধ্যমে বিস্তার দশায়, বিস্তারিত অবস্থায় থাকা কণাগুলো বা কোলয়েড কণাগুলো একত্রিত হয়ে মাধ্যমের তলদেশে কিংবা উপরে ভেসে উঠে।
২। সাসপেনশন প্রক্রিয়াটি কণার আকার, বিস্তার মাধ্যমে (সান্দ্রতা কণাগুলোর পারস্পরিক অন্তঃক্রিয়ার উপর নির্ভর করে। কোয়াগুলেশন প্রক্রিয়াটি যান্ত্রিক, রাসায়নিক বা ভৌত পদ্ধীত দ্বারা সম্পন্ন করা হয়।
৩। কোয়াগুলেশনের ক্ষেত্রে যথাযথ রাসায়নিক পদার্থ যোগ করা হয় সূক্ষ্ম কলয়েডিয় কণার সুস্থিতা নষ্ট করার জন্য। সাসপেনশনের কণাকে তলানীতে জমা হবার জন্য কোন পদার্থ যোগ করা প্রয়োজন হয় না।
গরুর দুধের কম্পজিশনে পানি ৮৬ দশমিক ৫ শতাংশ, ল্যাকটোজ ৪ দশমিক ৮ শতাংশ, ফ্যাট ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, প্রোটিন ৩ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ শূন্য দশমিক ৭ শতাংশ। গরুর দুধ সব পুষ্টির আধার ও শক্তির উৎস।
দুধের উপাদানগুলো নিম্নরূপ-
১। পানি : দুধে পানির পরিমাণ 87-90% দুধের PHমান 6.5 -6.75
২। কার্বোহাইড্রেট : দুধের প্রধান কার্বোহাইড্রেট হচ্ছে ল্যাকটোজ যা একটি ডাই স্যাকারাইড। এটি গ্যালাক্টোজও গুকোজ এ দুটি উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। ল্যাকটোজ কেবলমাত্র দুধেই পাওয়া যায়। এর পরিমাণ আনুমানিক 5%
৩। প্রোটিন : দুধের অধিকাংশ N2 প্রোটিন হিসেবে থাকে। তবে প্রোটিনের পরিমাণ প্রজাতির উপর নির্ভর করে। দুধের প্রোটিনকে ২ ভাগে ভাগ করা হয়। N2 গ্যাস দুধকে জারিত হওয়া থেকে রক্ষা করে।
i) ক্যাজেইন (Casein)/ক্যাসিন
ii) ল্যাকটালবুমিন/হোয়েপ্রোটিন (whey protein)
এছাড়া বিভিন্ন ধরনের এনজাইম এদের মধ্যে আছে। এর পরিমাণ 3 – 4%
৪। চর্বি : এতে চর্বির পরিমাণ 3.5 – 6%। এটি প্রধানত ট্রাই গ্লিসারাইড হিসেবে থাকে।
৫। খনিজ পদার্থ : এর পরিমাণ প্রায় 1%Ca,Mg,K,Na,Cl− ও CO32−– লবণ থাকে যা শিশুদের শারীরিক বৃদ্ধির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে দুধে লৌহ জাতীয় পদার্থ কম থাকে।
৬। ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ : দুধের ভিটামিনগুলো চর্বিতে দ্রবণীয় থাকে। ভিটামিন A, ভিটামিন B, ভিটামিন C, ভিটামিন E দুধের মধ্যে বিদ্যমান যা শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে।
ঘি হলো পরিশোধিত মাখন। মাখনকে উত্তপ্ত করে বিগলিত করার পর ছাকন করে অবাঞ্চিত উপাদান পৃথক করার পর অবশিষ্ট স্বচ্ছ হলুদ বর্ণের তরলই ঘি।
প্রস্তুতি: লোহা বা অ্যালুমিনিয়াম কড়াইয়ে মাখন নিয়ে মৃদু তাপে ধীরে ধীরে উত্তপ্ত করা হয়। মাখন প্রথমে 30∘C তাপমাত্রায় গলতে শুরু করলেও সম্পূর্ণরূপে 64∘C তাপমাত্রা প্রয়োজন হয়। 94∘C তাপমাত্রায় বেশির ভাগ পানি বাষ্পাকারে অপসারিত হয়। এই অবস্থায় এটি ঘন হয়ে যায় এবং বুদবুদের সৃষ্টি হয়। অতঃপর 110∘C তাপমাত্রায় অবাঞ্চিত উপাদানসমূহ উপরিতলে ভেসে উঠে দানাদার আকার ধারণ করে। 120∘C তাপমাত্রায় এই দানাগুলো কড়াইয়ের নিচে জমা হতে শুরু করে ও উপরের তরল অবস্থায় ছোট ছোট বুদবুদের সৃষ্টি হয়।
এই অবস্থায় মিশ্রণটিকে ধীরে ধীরে ঠান্ডা করা হয়। উপরিস্তর হতে ছাঁকন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তরল ঘি পৃথক করা হয়। এভাবে প্রাপ্ত ঘি জিঙ্কের আবরণযুক্ত টিনের পাত্রে বা কৌটায় সংরক্ষণ করা হয়। ঘি কখনোই লোহা বা তামার পাত্রে সংরক্ষণ করা উচিত নয়। দুধের উৎস এবং এখন হতে ঘি উৎপাদনের সময় তাপমাত্রার উপর নির্ভর করে ঘি এর স্বাদ, বর্ণ ও গন্ধ পরিবর্তিত হতে পারে।
পারফিউমারী হলো অত্যাবশ্যকীয় তেল সুগন্ধিযুক্ত যৌগের সংবন্ধনকারী এবং দ্রাবকের আনুপাতিক মিশ্রণ, যা মানুষ শরীরে ব্যবহার করে। দেহের সৌন্দৰ্য্যবৃদ্ধি ও দুর্গন্ধ দূর করার জন্য এবং জীবাণুনাশক হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়। ট্রয়লেট্রিজ হলো বৈশিষ্ট্যমূলক সুবাসিত, গন্ধনির্গমণ ও নি:সরণকারী পদার্থ যা মুখের অভ্যন্তরে পরিস্কার করে চুল পরিস্কার করে এবং দেহকে পরিস্কার রাখে।
গোলাপ জল হচ্ছে গোলাপ ফুলের পাপড়ির পাতিত অংশের হাইড্রোসল। গোলাপ তেল তৈরীতে সহ উৎপাদ হিসেবে গোলাপ জল পাওয়া যায়। এটি খাদ্যের সুগন্ধি হিসেবে, সৌন্দর্য বর্ধক ও সুগন্ধযুক্ত প্রসাধনী তৈরিতে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ওষুধ তৈরীতে এটি ব্যবহৃত হয়। গোলাপ তেলের দুটি অংশ আছে।
১। কঠিন পদার্থ : যার পরিমাণ 30%। এটি গন্ধহীন কিন্তু সুগন্ধীকে স্থায়ী করতে এটি অংশগ্রহণ করে।
২। তরল অংশ : এর মধ্যে বেশির ভাগ হচ্ছে পানি এবং অবশিষ্ট হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের তরল জৈব যৌগ। গোলাপ জলের সুগন্ধির জন্য যে জৈব যৌগটি দায়ী তার নাম হচ্ছে ফিনাইল ইথানল। তাছাড়া সাইট্রোনিল নামক Essential Oil এক্ষেত্রে সুগন্ধির বিস্তারে সহায়তা করে। সাধারণত জীবাণুমুক্ত এবং সতেজ গোলাপের পাপড়ি একটি আবদ্ধ পাত্রে নিয়ে পাতন করা হলে একটি নির্দিষ্ট সময় পর তৈলাক্ত অংশ পানির উপর ভেসে উঠে। অতঃপর একটি পরিষ্কার কাপড়ের সাহায্যে তৈলাক্ত অংশটিকে পৃথক করে নিলে যে পরিশ্রুত তরল পাওয়া যায় তাই ঘরে তৈরী গোলাপজল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এর মধ্যে কিছু C2H5OHPreservative হিসেবে ব্যবহার করা হলে এভাবে তৈরি গোলাপজল ২-৩ মাস ধরে ব্যবহার করা যায়। তবে শিল্প ক্ষেত্রে বাষ্পপাতন পদ্ধতির সাহায্যে গোলাপজল তৈরি করা হয়।
চুল প্রধানত প্রোটিন অণু দ্বারা তৈরি যা আসলে α-অ্যামিনো এসিডের পলিমার। চুলের অধিকাংশ প্রোটিন হল কেরাটিন বা ক্যারোটিন যা ১৬-১৮ শতাংশ সিস্টিন নামক α-অ্যামিনো এসিড দ্বারা তৈরি। চুল এবং চামড়ার স্থিতিস্থাপকতা রক্ষার জন্য তেল ব্যবহৃত হয়। আমাদের দেশে নারিকেল তেলের ব্যবহার বেশি হলেও অলিভওয়েল, কাস্টার ওয়েল, সানফ্লাওয়ার ওয়েল প্রধান উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তেল তৈরিতে উপকরণসমূহ হলো-
১। বিশুদ্ধ বা ভেজালমুক্ত নারিকেল তেল।
২। বিভিন্ন ধরনের ভেষজ পদার্থের মিশ্রণ। যেমন : আমলকির রস, হরিতকির রস, নিমপাতার রস ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। এছাড়া তেলকে স্থায়ী করার জন্য এভারেফিক্স নামক রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহৃত হয়।
৩। Preservative হিসেবে সামান্য অ্যালকোহল মিশ্রিত করা হয়।
৪। নির্দিষ্ট গন্ধ এবং বর্ণযুক্ত করার জন্য বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধিদ্রব্য ও রং ব্যবহার করা হয়
টেলকম পাউডার ব্যবহারে শরীরের ঘাম ও আর্দ্রতা প্রতিরোধ হয় এবং শরীর শুষ্ক থাকে। এটি পিচ্ছিলকারক হওয়ায় শরীরে ময়লা জমতে পারে না এবং ঘর্ষণজনিত প্রদাহ দুর করে। তাছাড়া Anti-Ceptic মিশ্রিত থাকার কারণে ক্ষতস্থানে সহজে ব্যাকটেরিয়া জন্মাতে পারে না। এর উপকরণসমূহ নিম্নরূপ:-
১। ট্যালক : এর প্রধান উপাদান হলো ট্যালক (Talc)। এর রাসায়নিক নাম হল হাইড্রেটেড ম্যাগনেশিয়াম সিলিকেট (3MgO.4SiO2⋅H2O) বা Mg3H2(SiO3)4 এটি কঠিন পদার্থ। এটি গুড়া করা হলে সাদা বর্ণের পিচ্ছিল এবং মিহি পাউডারে পরিণত হয়। এটি ত্বকের কোমলতা বৃদ্ধি করে।
২। জিংক স্টিয়ারেট(C17H35COO)2Zn বা Mg স্টিয়ারেট : এগুলো অতিরিক্ত পিচ্ছিলকারক হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এছাড়া (C17H35COO)2Zn এন্টিসেপটিক হিসেবেও কাজ করে। তাছাড়া সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি হতে ত্বককে রক্ষা করে।
৩। CaCO3এবং MgCO3: এরা টেলকম পাউডারকে হালকা করার জন্য এবং ফাঁপা বা ফোলানোর জন্য ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া এদের ঘাম শোষণ করে আর্দ্রতা দূর করার ক্ষমতা আছে।
৪। বোরিক এসিড H3BO3: এটি এন্টিসেপটিক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
৫। উপযুক্ত সুগন্ধি দ্রব্য : যা দেহে ও মনে ফুরফুরে আমেজ সৃষ্টি করে।
ঘামাছি প্রতিরোধের জন্য অনেক সময় অনেক ক্ষেত্রে সামান্য Essential Oil, চন্দন কাঠের নির্যাস ও ফুল গাছের পাতা ও ফুলের নির্যাস ব্যবহৃত হয়। কারণ এদের এন্টি ব্যাকটেরিয়া এবং এন্টি ফাংগাস ধর্ম থাকে। তাছাড়া Face Powder তৈরীর ক্ষেত্রে শক্তিশালী বাইন্ডিং Agent হিসেবে বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহৃত হয়।
স্নো ত্বকের তেলতেলে ভাব কমিয়ে দেয় এবং ত্বককে সুস্থ রাখে। এটি ত্বকে লাগালে খুব দ্রুত মিশে গিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায় বলে একে Vanishing Cream বলা হয়। Snow হলো পানিতে তেলের একটি ইমালশন, গরমের দিনে এটির ব্যবহার আরামপ্রদ। এটি অন্যান্য প্রসাধনীর মতো ত্বকে কৃত্রিম প্রলেপ সৃষ্টি করে না। স্লো এর প্রধান উপাদান H2O হলেও এতে যথেষ্ট পরিমাণ স্টিয়ারিক এসিড থাকে। এ স্টিয়ারিক এসিডের 20-30 শতাংশ NaOH বা KOH ক্ষার দ্বারা প্রশমিত করা হয়। যদি সব স্টিয়ারিক এসিড প্রশমিত করা হয় তবে তা সম্পূর্ণরূপে সাবানে পরিণত হয়ে যাবে। স্টিয়ারিক এসিড ও ক্ষারের বিক্রিয়া সাবানের ন্যায় অংশ, অতিরিক্ত স্টিয়ারিক এসিড পানির সাথে মিশ্রিত হয়ে যে ইমালশন তৈরী করে তাই হলো স্নো। ক্ষার হিসেবে KOHব্যবহৃত হলে উৎপন্ন স্নো এর কোমলতা বেশি থাকে। তাছাড়া Snow এর সাথে অনেক ক্ষেত্রে সামান্য পরিমাণ গ্লিসারিন মিশ্রিত করা হয়। তবে এ ধরনের ক্রিমের প্রস্তুতিতে গ্লিসারিন ব্যবহৃত হয় বিধায়ত্বকে সহজে মিশে যায়। ফলে ক্রিমে ব্যবহৃত পানি সহজে ত্বকের তাপ শোষণ করে বাষ্পে পরিণত হয় ও শীতল অনুভূতি হয়। এ কারণের গরমের দিনে ভানিশিং ক্রিম ব্যবহার আমারাদায়ক। তাছাড়া সুগন্ধি দ্রব্য হিসেবে বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি যুক্ত পদার্থ মিশ্রিত করা হয়। পচন নিবারক হিসেবে 0.02% প্রোপাইল প্যারাহাইড্রক্সি বেনজোয়েট ব্যবহৃত হয় তাই উপকরণগুলো হলো
১। স্টিয়ারিক এসিড বা স্টিয়ারিক এসিডের উৎস হিসেবে বিভিন্ন তেল বা চর্বি।
২। NaOH বা KOH
৩। H2O
৪। গ্লিসারিন
৫। সুগন্ধি দ্রব্য
Cold Cream হলো এক ধরনের ইমালশন যাতে তেলের মধ্যে পানি মিশ্রিত অবস্থায় থাকে। এটি ত্বককে অতিরিক্ত শুষ্কতার হাত থেকে রক্ষা করে। এটি ত্বকে প্রয়োগ করা হলে ইমালশনের বিয়োজনে পানি বাস্পায়িত হয়ে শরীরের শীতল অনুভূতি প্রদান করে এবং ত্বককে ফেটে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। এটি শীতকালে ব্যবহৃত হয়। তেল বা চর্বি হিসেবে বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ তেল এবং প্রানীজ তেল ব্যবহৃত হয়।
কিন্তু দীর্ঘদিন ব্যবহারে উদ্ভিজ্জ তেলে পচন ধরে যায় এবং বর্তমানে প্যারাফিন তেল ব্যবহৃত হয়। ইমালশন তৈরি সহজ করার জন্য সামান্য পরিমাণ বোরাক্স (Na2 B4O7) ব্যবহৃত হয়। সুগন্ধি দ্রব্য হিসেবে গোলাপ জল ব্যবহৃত হয়। ZnOমিশ্রিত করা হলে উৎপন্ন ক্রীম বেশ উজ্জ্বল ও সাদা হয়। তাছাড়াও এর সাথে H2Oমিশ্রিত করা হয়। তিল প্যারাফিন লুব্রিকেটিং এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। শিক্ত প্যারাফিন জমাট বাধার কাজে ব্যবহৃত হয়। গ্লিসারিন আর্দ্রতারোধক এবং পানি ইমালশন এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। এর ত্বক কোমলায়ন বৈশিষ্ট্য আছে এবং ত্বকের পানি শূন্যতাকে বাধাগ্রস্ত করে।
প্রসাধনী সামগ্রী হিসেবে ব্যবহৃত লিপিস্টিক ঠোটের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং কোমলতা বৃদ্ধি করে। আমাদের দেহের তাপমাত্রার মধ্যে মুখমন্ডলের তাপমাত্রা একটু বেশি থাকে তাই লিপিস্টিকের গলনাঙ্ক তাপমাত্রার চেয়ে কিছুটা বেশি হতে হয়। লিপিস্টিক তৈরিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন রাসায়নিক সামগ্রী নিজেদের মধ্যে বিক্রিয়ার ফলে বিষাক্ত পদার্থের সৃষ্টি হতে পারে। এ প্রক্রিয়াকে র্যানসিডিটি বলা হয়। এটি রোধ করার জন্য Preservative এবং Anti-oxidant ব্যবহৃত হয়। এর প্রধান উপাদান হলো মোম। এটি সাধারণত মৌচাকের মোম বা Paraffin মোম বা বিভিন্ন উচ্চতর Alcohol থেকে প্রাপ্ত মোম বা উদ্ভিজ্জ এবং খনিজ তেল থেকে প্রাপ্ত চর্বিকে লিপিস্টিক তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। তাছাড়া Binding Agent হিসেবে পলিটেট্রা-ফ্লুরো-ইথিন ব্যবহৃত হয়। এটি Hydro-phobic এবং লিপোফিলিক হয়। তেল, চর্বি ও মোমের সাথে সমসত্ত্ব মিশ্রণ তৈরি করে। এ মিশ্রণ ঠোটের উপরে পাতলা স্তর সৃষ্টি করে। Pigment বা রং হিসেবে ফেরাস বা ফেরিক অক্সাইড, ক্রোমিয়াম অক্সাইড ব্যবহৃত হয়। নির্দিষ্ট সুগন্ধিযুক্ত করার জন্য নির্দিষ্ট সুগন্ধি দ্রব্য ব্যবহৃত হয়। Preservative হিসেবে Alcohol ব্যবহৃত হয়।
Shave করার সময় ত্বকের উপরিভাগের গঠনকোষ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে অপেক্ষাকৃত ভেতরের নতুন কোষ উন্মুক্ত হয়ে যায়। এ নতুন কোষগুলো কয়েক ঘন্টা বেশ সংবেদনশীল থাকে। তাছাড়া সাবান, ক্ষার জাতীয় পদার্থ ইত্যাদি কোষে পৌছে জ্বালাপোড়া ও ক্ষত সৃষ্টি হতে পারে। তাই After Shave এ সাধারণত বেদনানাশক, জীবাণুনাশক, ঠান্ডাকারক, রক্তক্ষরণ বন্ধকারক ধর্ম থাকে। এক্ষেত্রে Anti-septic হিসেবে স্বভাবচ্যুত অ্যালকোহল বা Denatured/আলকাইন ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া Anti-septic পদার্থের জ্বালা দূর করার জন্য কিছু সুগন্ধি পদার্থ বা Essential Oil ব্যবহৃত হয়। ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন ধরনের অ্যালকোহল ব্যবহৃত হয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে PHনিয়ন্ত্রণের জন্য বোরিক এসিড (H3BO3) ব্যবহৃত হয়। সুতরাং এর উপাদানগুলোকে নিম্নরূপে প্রকাশ করা যায়
১। Anti-septic যেমন- অ্যালকোহল ।
২। পানি।
৩। Moisturizer হিসেবে বিভিন্ন Alcohol
৪। সুগন্ধি দ্রব্য।
Shave করার সময় ত্বকের বেশি ক্ষতি হলে সেক্ষেত্রে লোশান ব্যবহার করলে তীব্র জ্বালাপোড়া হয়, তাছাড়া আহত স্থান সুরক্ষিত হয়। সেক্ষেত্রে ক্রীম ব্যবহার করা ভালো। এটি এক ধরনের ইমালশন যার PHমান ত্বকের PHমানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। (ত্বকের PH মান 5-6)।
পদ্ধতি : (i) 200 mL থেকে 250 mL আয়তনের একটি ভালো মানের প্লাস্টিকের পরিষ্কার বোতল নাও।
(ii) মেজারিং সিলিন্ডারের সাহায্যে 2.0 mL লিকার অ্যামোনিয়া নিয়ে খুব সাবধানে ধীরে ধীরে এর মধ্যে আরও 18 ml রাবিং অ্যালকোহল বা আইসো প্রোপাইল অ্যালকোহলকে মিশ্রিত কর।
(iii) সারফেকট্যান্ট হিসেবে 2 mL সোডিয়াম লরাইল সালফেট, C12H35OSO3Naযোগ কর ।
(iv) অ্যালকোহলের উদ্বায়িতা হ্রাস করার জন্য 2 mL ইথিলিন গ্লাইকল যোগ করে মিশ্রণকে একটু ঝাঁকিয়ে নাও।
(v) মেজারিং সিলিন্ডারের সাহায্যে 76 mL পাতিত পানি পরিমাপ করে বোতলের মিশ্রণের মধ্যে যোগ কর। এবার ভালোমতো ঝাঁকাও ও প্রয়োজনমতো সুগন্ধি ও বর্ণকারক যোগ করে নাও। বোতলের মুখে বায়ু পাম্প স্প্রে লাগিয়ে দাও। তোমার প্রস্তুত করা গ্লাস ক্লিনার দিয়ে ল্যাবরেটরির ময়লাযুক্ত গ্লাস পরিষ্কার করে নাও।
মল্ট ভিনেগার (Malt vinegar): অঙ্কুরিত বার্লি বা অন্য কোন শস্য দানা (মল্ট) ও ইস্ট থেকে নিঃসৃত এনজাইমের সাহায্যে স্টার্চ থেকে যে ভিনেগার প্রস্তুত করা হয় তাকে মল্ট ভিনেগার বলে। অর্থাৎ শ্বেতসার বা স্টার্চ থেকে এ ধরনের ভিনেগার প্রস্তুত করা হয়।
ভিনেগার হলো অ্যাসিটিক অ্যাসিডের 6 --10 % জলীয় দ্রবণ। ফরাসি শব্দ "VIN" অর্থ মদ এবং AIGRE অর্থ টক, যা হতে ভিনেগার শব্দটির সৃষ্টি। ভিনেগারের pH মান 4.74,এই pH - এ অণুজীবের বংশ বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হয়।অধিকাংশ অণুজীবের বংশবিস্তারের অনুকূল pH পরিসর 6.5--7.5। অম্লীয় পরিবেশে অনুজীব বংশবৃদ্ধি করতে পারেনা এবং 6--10% অ্যাসিটিক এসিডের জলীয় দ্রবণ মানব স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়।তাই ভিনেগার বা সিরকা খাদ্যে প্রিজারভেটিভ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
খাবার পচনের মূল কারণ দুটি :
1.ক্ষতিকারক বা প্যাথোজেন জাতীয় ব্যাকটেরিয়ার জন্ম।
2.খাদ্যে অক্সিজেন দ্বারা জারণ ক্রিয়ার মাধ্যমে খাবারের পুষ্টিকর উপাদান ভেঙে যাওয়া অর্থাৎ খাবারের কোষ প্রাচীরে জারণের ফলে খাবার নষ্ট হয়।
অতএব ভিনেগারের ব্যবহারে খাবারের উপরোক্ত দুটি প্রক্রিয়া ব্যাহত হয় বিধায় খাবারের জীবাণুর আক্রমণ প্রতিরোধ ও খাবারের গুণগত মান সঠিকভাবে বজায় থাকে। এভাবে খাবারকে ভিনেগার সংরক্ষণ করে।
খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষক হিসেবে ব্যবহৃত উপাদান সমূহের মধ্যে সাশ্রয়ী বিধায় ভিনেগার বা সিরকা সর্বোচ্চ পরিমাণে ব্যবহৃত হয়।খাদ্যদ্রব্য সংরক্ষণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে কোনভাবেই যেন তাতে অনুজীবের সংক্রমণ না ঘটে।ভিনেগারের উপস্থিতিতে খাদ্যদ্রব্যে অনুজীবের সংক্রমণ রোধ নিশ্চিত হয়এবং এই অবস্থায় খাদ্যকে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। ভিনেগার একটি সনাতন ও বহুল প্রচলিত প্রাকৃতিক খাদ্যসংরক্ষক এবং এটি অম্লীয় স্বাদযুক্ত বিধায় বিভিন্ন প্রকার আচার সংরক্ষণের পাশাপাশি এটি খাদ্যের স্বাদ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
উৎপাদনের উৎসের ভিন্নতার কারণে পাঁচ ধরনের ভিনেগার পাওয়া যায় :
1.ফলজাত ভিনেগার 2. মদজাত ভিনেগার 3.চালজাত ভিনেগার 4.সাদা পাতিত ভিনেগার 5. স্বাদ গন্ধযুক্ত ভিনেগার।
বানিজ্যিকভাবে বাজারে মনোহারী বা মোদির দোকানে কাচের বোতলে কিনতে পাওয়া যায়। এই ভিনেগারে সামান্য অ্যালকোহল,টারটারিক এসিড,শর্করা জাতীয় পদার্থ এবং সুগন্ধিযুক্ত এস্টার মিশ্রিত থাকে। আবার কুইক ভিনেগার পদ্ধতিতে ইথানয়িক এসিড থেকে প্রস্তুতকৃত ভিনেগারকে white বা সাদা ভিনেগার বলে।
খাবার সংরক্ষণে ভিনেগার প্রাকৃতিক প্রিজারভেটিভস হিসেবে যেসব ভূমিকা পালন করে তার মধ্যে অন্যতম হলো:
1) আচার সংরক্ষণে:
সব ধরনের আচার যেমন- আম, জলপাই,আমড়া, তেঁতুল, চালতা, রসুন,বরই ইত্যাদির আচার সকল স্বাদের (ঝাল অথবা মিষ্টি ) প্রতি ক্ষেত্রেই সংরক্ষণের জন্য ভিনেগার প্রয়োজন হয়।
2) মাছ- মাংস সংরক্ষণে:
মাছ-মাংস কৌটাজাত করনে ভিনেগারের বিকল্প খুঁজে পাওয়া বিরল,কারণ এটি এদের পচন রোধে বিরাট অবদান রাখে।তবে ফলের মতো ইচ্ছা করলে মাংসেরও আচার তৈরি করে সংরক্ষণ করা সম্ভব।
3) স্যুপের স্বাদ বৃদ্ধিতে:
আমাদের ছোট ছেলেমেয়ে স্যুপ খুব পছন্দ করে। প্রাকৃতিক ভিনেগারের স্বাদ টক জাতীয় এবং এটি স্বাস্থ্যসম্মত বিধায় এর সামান্য অংশ স্যুপে যোগ করে তার স্বাদ বৃদ্ধি করা যায়।
4) সুস্বাদু সালাদ তৈরিতে:
আমাদের প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় যে সালাদ অপরিহার্য তার স্বাদ বৃদ্ধির জন্য ভিনেগার যোগ করা যায়।
5) রোগ প্রতিরোধে ভিনেগার :
শারীরিক বহুমাত্রিক রোগ প্রতিরোধে খাবারের সাথে ভিনেগার মেশানো হয়ে থাকে। এটি মুখে রুচি ফিরিয়ে আনে,রক্ত সরবরাহ প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করে, হজম শক্তি বাড়িয়ে দেয়,রক্তের অতিরিক্ত চর্বি অপসারণ ও রক্তচাপ হ্রাস করে।শরীরে সৃষ্ট তরল অপদ্রব্য নিঃসরণ কাজে সহায়তা করে।এটি ক্যান্সার ও টিউমার প্রতিরোধে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
6) শাকসবজি সংরক্ষণে ভিনেগার:
শাকসবজি সব এলাকায় সমানভাবে জন্মায় না।এক এলাকার শাকসবজি অন্য এলাকায় পেতে হলে তার পচন রোধে ভিনেগার ব্যবহার করা হয়। ফলে শাক সবজির গুনাগুন অক্ষুন্ন থাকে। তাছাড়া শাকসবজিতে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম,আয়রন, ফসফরাস ইত্যাদি খনিজ উপাদান শরীরের উপযোগীতে পরিণত করতে ভিনেগার বিশেষ ভূমিকা রাখে।
7) ব্যাকটেরিয়া ও বিষাক্ততা নষ্ট করে :
অনেক সময় বিভিন্ন খাদ্যে বিদ্যমান ব্যাকটেরিয়া ও বিষাক্ত পদার্থ দূরীকরণে ভিনেগার ব্যবহৃত হয়। ব্যবহৃত ভিনেগার খাদ্যে ব্যাকটেরিয়ার স্বাভাবিক প্রজনন ক্রিয়া নষ্ট করে দেয়।
পেশীকে মসৃণ করে ভিনেগার:
ভিনেগার ল্যাকটিক এসিডের পরিমাণ কমিয়ে পেশিকে মসৃণ রাখে। এছাড়া ক্যান্সার বা অস্বাভাবিক কোষ বিভাজন নিয়ন্ত্রণ করে।
9) জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে ভিনেগার: মানবদেহে বটুলিনাম টক্সিন রোটক্স উৎপন্ন করে, যা ভীষণ বিষাক্ত। ভিনেগার শুধু বটুলিনাম নয়,এটা থালমোনেলা,লিস্টোরিয়া এবং স্ট্যাফাইলোকক্কাসের বিরুদ্ধে জীবাণুনাশক হিসেবে কাজ করে।
10) বিভিন্ন ফাষ্টফুডে ভিনেগার:
ফুটপাতের চটপটি থেকে শুরু করে আধুনিক ফাষ্টফুডের রকমারি রেসিপি ভিনেগার ছাড়া চলে না। রেসিমোস থেকে শুরু করে বানিজ্যিক টমেটো কেচাপ,মেয়নিজ,সয়াসচ সংরক্ষণে ভিনেগার গুরুত্বপূর্ণ।সুগন্ধি ভিনেগার ব্যবহারে খাদ্যের স্বাধ ও গন্ধ বৃদ্ধি পায়।।
প্রকৃতপক্ষে খাদ্য সংরক্ষণে ভিনেগার এর কোন তুলনা হয় না। এটি প্রাকৃতিক খাদ্য সংরক্ষক হিসেবে বহুল প্রচলিত কারণ --
ক) ভিনেগারের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
খ) এটি একটি মৃদু এসিড হাওয়ায় খাবারের সাথে গ্রহণ করলে এসিডিটি বাড়ার কোনো সম্ভাবনা থাকেনা, বরং খাবার ও দেহের pH এর সমতা বজায় রাখে।
গ) এটি অম্লীয় দ্রবণ বিধায় এর প্রভাবে সংরক্ষিত খাদ্যদ্রব্যের দ্রবণের pH মান কমে যায়।অনুজীব বিশেষ করে ব্যাকটেরিয়া জন্মানো ও বংশ বিস্তারের অনুকূল পরিবেশ পায় না।ইথানয়িক এসিডের শুধুমাত্র 6% জলীয় দ্রবণের pH মান প্রায় 2.35 যা ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট।
ঘ) এটি পানিতে যে কোন অনুপাতে দ্রবণীয়। কারণ এটি পানির অনুর সাথে কার্যকরী হাইড্রোজেন বন্ধন গঠন করতে পারে। ফলে খাদ্যের পানির সাথে সহজে মিশে সর্বত্র সুষম মাত্রা বজায় রেখে অণুজীবের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
ঙ) এর স্ফুটনাঙ্ক পানি অপেক্ষা বেশি হওয়ায় খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় তাপ প্রয়োগে এর বাষ্পীভূত হওয়ার সুযোগ থাকেনা।